বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) শাখার সভাপতি সাদিক কায়েম ও সেক্রেটারি জেনারেল এস এম ফরহাদের আত্মপ্রকাশের পর এবার ১৪ সদস্যের একটি পূর্ণাঙ্গ কমিটি প্রকাশ্যে এসেছে।
বুধবার (২ অক্টোবর) সংগঠনটির অফিসিয়াল ফেসবুক পেইজে এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে প্রকাশিত এই কমিটির কয়েকজনের অভূতপূর্ব একাডেমিক সাফল্য ও ফলাফল অর্জনের কথা জানা গেছে।
এর মধ্যে ঢাবি শাখার সভাপতি সাদিক কায়েম অন্যতম। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৬-১৭ সেশনের শিক্ষার্থী। মেধাবী এই তরুণ স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ফলাফলে নিজ বিভাগের মধ্যে তৃতীয় হয়েছিলেন। স্নাতকে তার সিজিপিএ ছিল ৩ দশমিক ৭৮। তবে স্নাতকোত্তরে সাদিক কায়েমের সিজিপিএ কত ছিল সেটি জানা সম্ভব হয়নি। সাদিক খাগড়াছড়ি বায়তুশ শরফ জব্বারিয়া আদর্শ মাদ্রাসা থেকে দাখিল এবং পরবর্তীতে চট্টগ্রামের বায়তুশ শরফ থেকে আলিম পাশ করেন। এরপর ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে।
সাংগঠনিক সম্পাদক মহিউদ্দিন খান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের ২০১৮-১৯ সেশনের শিক্ষার্থী। তিনি অনার্সে ৩ দশমিক ৯৩ সিজিপিএ পেয়ে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম এবং মাস্টার্স প্রথম সেমিস্টারে ৪.০০ আউট অব ৪.০০ (সিজিপিএ) অর্জন করেন। তার বাড়ি রাজশাহী বিভাগের জয়পুরহাট জেলায়।
কমিটিতে থাকা ছাত্র আন্দোলন ও মানবসম্পদ উন্নয়নবিষয়ক সম্পাদক মো. মাজহারুল ইসলাম স্নাতকের ফলে বিভাগে প্রথম স্থান অধিকার করে গোল্ড মেডেল পুরস্কার অর্জন করেছেন। ২০১৮-১৯ সেশনের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের এই শিক্ষার্থী বর্তমানে স্নাতকোত্তরের দ্বিতীয় সেমিস্টারে অধ্যয়ন করছেন। স্নাতকোত্তরের প্রথম সেমিস্টারে তার ফল সিজিপিএ ৪.০০ এর মধ্যে ৪.০০।
কমিটিতে বায়তুল মাল (অর্থ) সম্পাদক হিসেবে আছেন ২০১৫-১৬ সেশনের তথ্যবিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার বিভাগের শিক্ষার্থী আলাউদ্দিন আবিদ। তার বিরুদ্ধে ৪টি মামলা রয়েছে বলে জানা গেছে। মামলার বোঝা বয়ে বেড়ানো, কারাবরণ করা এবং ইয়ার ড্রপ দেওয়াসহ নানা প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে তিনি অনার্সের ফলে সিজিপিএ ৪.০০ এর মধ্যে ৩.৬৮ এবং মাস্টার্সে ৩.৭৬ অর্জন করেছেন। তার বাড়ি চট্টগ্রামের মীরসরাইয়ে। দাখিল ও আলিম শেষ করেছিলেন সেখানকার একটি মাদ্রাসা থেকে। তখন থেকে তিনি ছাত্রশিবিরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকায় জেলে যেতে হয়েছিল ৪ বার। আর জেলে ছিলেন প্রায় ১৯ মাস। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পরেও অন্য আরেকটি মামলায় ওয়ারেন্ট জারি হওয়ায় ফের কারাগারে যেতে হয় তাকে।
কমিটিতে থাকা স্কিল ডেভেলপমেন্ট সম্পাদক আবদুল্লাহ আল আমীন ২০১৯-২০ সেশনে সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত ‘ঘ’ ইউনিটের ১ম বর্ষ স্নাতক (সম্মান) শ্রেণির ভর্তি পরীক্ষার মানবিক বিভাগ থেকে প্রথম হয়েছিলেন। বর্তমানে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের ৭ম সেমিস্টারে অধ্যয়ন করছেন। বিভাগের সর্বশেষ সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষায় তার সিজিপিএ ৩.৯২ বলে জানা গেছে।
পূর্ণাঙ্গ কমিটির বাকি সদস্যরা হলেন- প্রচার ও মিডিয়া সম্পাদক ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ২০১৭-১৮ সেশনের হোসাইন আহমাদ জুবায়ের, অফিস সম্পাদক ফুটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ২০১৮-১৯ সেশনের ইমরান হোসাইন, দাওয়াহ ও ছাত্রকল্যাণ সম্পাদক আরবি বিভাগের ২০১৮-১৯ সেশনের হামিদুর রশিদ জামিল, সাহিত্য, সংস্কৃতি ও প্রকাশনা সম্পাদক বিভাগের ২০১৮-১৯ সেশনের নুরুল ইসলাম নূর, বিজ্ঞান ও ক্রীড়া সম্পাদক ফলিত রসায়ন ও কেমিকৌশল বিভাগের ২০১৮-১৯ সেশনের মো. ইকবাল হায়দার, শিক্ষা ও গবেষণা সম্পাদক সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৮-১৯ সেশনের মো. আনিছ মাহমুদ ছাকিব, আইন ও মানবাধিকার সম্পাদক আইন বিভাগের ২০১৭-১৮ সেশনের রিয়াজুল মিয়া, ব্যবসায় শিক্ষা ও আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক একাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগের ২০১৮-১৯ সেশনের হাসান মোহাম্মদ ইয়াসির, স্কিল ডেভেলপমেন্ট সম্পাদক অর্থনীতি বিভাগের ২০১৯-২০ সেশনের আব্দুল্লাহ আল আমিন।
কমিটি প্রকাশ্যে আসার বিষয়ে ঢাবি শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি সাদিক কায়েম বলেন, অন্যান্য সংগঠনের মতো করে আমাদের কমিটি হয় না। এজন্য আমাদের কমিটিতে সদস্য সংখ্যা কম মনে হতে পারে। ছাত্রদের নীতি নৈতিকতা, স্কিল ডেভেলপমেন্টসহ সার্বিক উন্নয়নের জন্য আমাদের বিভিন্ন বিভাগ রয়েছে। সেই বিভাগগুলো আমাদের কার্যক্রমগুলো তদারকি করে থাকে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের কমিটি জানুয়ারিতেই গঠিত হয়েছে। ফ্যাসিস্ট সরকারের নির্যাতন নিপীড়নের কারণে আমরা তা পাবলিকলি প্রকাশ করতে পারিনি। ২৪-এর ছাত্র জনতার গণ অভ্যুত্থানের মাধ্যমে এবং শহীদদের আত্মত্যাগের ফলে দেশ ফ্যাসিবাদের মুক্ত হয়েছে এবং আমরা আমাদের অধিকার ফিরে পেয়েছি।